কাজী সাঈদ ॥ খুলনা-গাজীপুরের মত নির্বাচন বরিশালে হতে দেব না। বরিশাল সিটি নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী, সাধারন কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থীদের সাথে নির্বাচন সংক্রান্ত মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার একথা বলেন। গতকাল সোমবার শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজের নাসিমুজ্জামান মেহেদী মিলনায়তনে এ সভায় জেলা প্রশাসক মোঃ হাবিবুর রহমান, মেট্রোপলিটন পুলিশের ভারপ্রাপ্ত পুলিশ কমিশনার মাহফুজুর রহমান, উপ-পুলিশ কমিশনার আঃ রউফ। জেষ্ঠ নির্বাচন কর্মকর্তা মোঃ হেলাল উদ্দিন বক্তব্য রাখেন।
উপস্থিত ছিলেন, মেয়র প্রার্থী মজিবর রহমান সরোয়ার, সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ, ইকবাল হোসেন তাপস, ওবায়দুর রহমান মাহবুব,এ কে আজাদ, ডা.মণীষা চক্রবর্তী, বশির আহমেদ ঝুনুসহ কাউন্সিলর প্রাথীরা উপস্থিত ছিলেন। ইসি মাহবুব তালুকদার বলেন, বরিশাল সিটি নির্বাচনে আমরা কারো কাছে নতি স্বীকার করবো না। কোন প্রকার প্রশাসনের শিথিলতা বরদাস্ত করা হবে না। নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে জানিয়ে দিয়েছি নির্বাচনের দিন ভোট কেন্দ্রে নিরাপত্তা পালনে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী যদি ব্যর্থ হয় তাহলে তাদেরকে রাখার প্রয়োজন নেই। বরিশাল আঞ্চলিক নির্বাচন কার্যালয়ের আয়োজনে রিটার্নিং অফিসার মজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় তিনি বলেন, সারা বিশ্বসহ দেশের মানুষ সিটি নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে আছে কোন ক্রমেই এই নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হতে দেয়া হবেনা। নির্বাচনে প্রশাসনের পক্ষ থেকে অতি উৎসাহি কিছু করা হবে না। তিনি বলেন, প্রশাসন আমাদের সহায়ক শক্তি তাদের নিয়ে আমাদের কাজ করতে হয়। ভোট একটি আমানত কোনভাবে প্রশাসন ব্যর্থ হলে কাউকে ছাড় দেয়া হবেনা। আমাদের কাছে যতগুলি অভিযোগ এসেছে তার প্রতিটি তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। এ সময় নির্বাচন কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষন করে নৌকা প্রতীকের মেয়র প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্ল¬াহ্ বলেন, বরিশাল সিটি নির্বাচনে ভোটাররা নির্বাচনের দিন নির্ভয়ে যাকে খুশী তাকে ভোট দেবে। আমরা চাইনা নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হোক। ধানের শীষের প্রার্থী মজিবর রহমান সরোয়ার বলেন, নির্বাচনে সেনা বাহিনী আসলে জনগণ বেশী খুশী হত। আমরা নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ দিয়েছি তার কি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তা জানতে চান তিনি। লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপস বলেন খুলনা ও গাজীপুরের সিটি নির্বাচনে কোন ধরনের মারামারি-হানাহানী হয়নি তাহলে কেন ভোটে অনিয়ম হয়েছে। বরিশালে খুলনা ও গাজীপুরের মত নির্বাচন হয় তাহলে আমাদের আর বলার কিছুই নেই। মেয়র প্রার্থী মনিষা চক্রবর্তী ও একে আজাদ বলেন, কতিপয় মেয়র প্রার্থী নির্বাচনী আচরন ভংগ করে যেখানে- সেখানে পোস্টার লাগিয়ে রেখে নিয়ম ভংগ করার পরও নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয় নাই। তারা নির্বাচনী ভিজেলেন্স টিমের সংখ্যা বাড়ানোর দাবী করেন। এর আগে দুপুরে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা এবং গঠিত টিম সমূহের সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় নির্বাচন কমিশনার মাহাবুব তালুকদার বলেন, গণতান্ত্রিক দেশে নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ হতে হয়। পাশাপাশি সর্বজন গ্রহণযোগ্য হতে হয়। বিতর্কিত নির্বাচন করে কোনো দেশে গণতন্ত্র আপন মহিমায় বিকশিত হতে পারে না। সবার জন্য সমান সুযোগ না থাকলে নির্বাচন অর্থবহ হবে না। এ সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সব সদস্যকে আমি নির্দেশ দিচ্ছি নির্ভয়ে এবং দৃঢ়তার সঙ্গে নিরপেক্ষতা বজায় রাখবেন। আইনশৃঙ্খলার ব্যাপারে আমরা জিরো ট্রলারেন্স গ্রহণ করেছি। তা কেউ অমান্য করলে আমরা আইন অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নেব। তিনি বলেন, আমরা চাই ভোটাররা নির্বিঘেœ বাড়ি থেকে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে তার পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে নিরাপদে আবার বাড়িতে ফিরে যাবেন। ভোটারদের চলাচল আপনারা (আইনশৃঙ্খলা বাহিনী) নিশ্চয়তা বিধান করবেন। ভোটকেন্দ্রে কারো অবাঞ্চিত প্রবেশ, ব্যালট পেপার ছিনতাই, জোর করে ব্যালটে সিল দেয়া এ ধরনের পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি বরিশালে দেখতে চাই না। যেকোনো অরাজকতা প্রতিহত করার জন্য পুলিশ ও অন্যান্য বাহিনীকে ব্যবস্থা নিতে আমি নির্দেশ দিচ্ছি। সর্বোচ্চ ব্যবস্থা কি তা নিশ্চয়ই আপনারা অনুধাবন করবেন। অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মো. নুরুল আলমের সভাপতিত্বে এ সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন- বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার (ভারপ্রাপ্ত) মাহফুজুর রহমান, বরিশাল আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও সিটি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. মুজিবুর রহমান, বরিশালের জেলা প্রশাসক মো. হাবিবুর রহমান, বরিশাল ডিজিএফআইর পরিচালক কর্নেল জিএম শরিফুল ইসলাম, র্যাব-৮ এর অধিনায়ক (অতিরিক্ত ডিআইজি) আতিকা ইসলাম, বরিশাল রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি হুমায়ন কবির, জেলা পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম প্রমুখ।
Leave a Reply